অবশেষে তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সালমা পারভীনকে বদলি করা হয়েছে!
বুধবার রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মাঠ প্রশাসন-২ শাখার যুগ্ম সচিব ড. আশরাফুল আলম স্বাক্ষরিত আদেশে তাকে গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে বদলি করা হয়।
৩৩তম বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডার সালমা পারভীন ২০২৩ সালের ১৩ ডিসেম্বর তাহিরপুর ইউএনও হিসেবে যোগদান করেন। এর আগে তিনি সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা ইউএনও হিসেবে দায়িত্বপালনরত অবস্থায় নানা অনিয়ম ও বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়লে তাকে তাহিরপুরে বদলি করা হয়।
জানা গেছে, উপজেলার খনিজ বালু-পাথরসমৃদ্ধ সীমান্ত নদী জাদুকাঁটা-১, জাদুকাঁটা-২ বালু মহাল ইজারা প্রদান করা হলে ইজারাদার সিন্ডিকেট চক্রের সঙ্গে গোপন সমঝোতায় পরিবেশ-বিধ্বংসী শতাধিক ড্রেজার মেশিনে নদীর দুই তীরজুড়ে এমনকি মহাল ইজারাবহির্ভূত সীমানা থেকে দিন-রাত বালু পাথর উত্তোলন করা হয়।
অবৈধ ড্রেজার মেশিনে বালু-পাথর উত্তোলন বন্ধ করতে ভুক্তভোগীরা সরাসরি কিংবা মোবাইল ফোনে কল করলেও তিনি ড্রেজার বন্ধে উদাসীনতা এমনকি বিরক্তবোধ করতেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
এ নিয়ে গেল ১৯ জুন যুগান্তর অনলাইনে নির্মাণাধীন জাদুকাঁটা সেতুতে এক ড্রেজারেই ক্ষতি ৬ কোটি টাকা, পরদিন ২০ জুন দৈনিক যুগান্তর পত্রিকায় প্রিন্ট ভার্সনে শেষ পৃষ্ঠায় ছবিসহ নির্মাণাধীন জাদুকাঁটা সেতু, এক ড্রেজারেই ক্ষতি ৬ কোটি টাকা- শিরোনামে সরজমিন প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপর ইউএনও ওই নদীতে অবৈধ ড্রেজার মেশিনে বালু-পাথর উত্তোলন বন্ধে নয়ছয় করে দেখছি-দেখছি বলে সময়ক্ষেপণ করতে থাকেন।
পরবর্তীতে ২৫ জুন ভূমিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে মুঠোফোনে জাদুকাঁটা নদীতে ড্রেজার মেশিন জব্দ ও ড্রেজার মালিকদের গ্রেফতারের নির্দেশনা প্রদান করেন।
ভূমিমন্ত্রীর বক্তব্যসহ যুগান্তর অনলাইন ও প্রিন্ট ভার্সনে ‘ড্রেজার মালিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ ভূমিমন্ত্রীর’ শিরোনামে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
এরপর তৎকালীন পুলিশ সুপার (অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) এহসান শাহ থানা পুলিশকে ড্রেজার মেশিন জব্দ ও ড্রেজার মালিকদের গ্রেফতারের নির্দেশনা প্রদান করেন।
২৬ জুন পুলিশ অভিযানে নেমে ৪টি ড্রেজার, ৪টি স্টিল বডি ট্রলারসহ এক ড্রেজার মালিককে গ্রেফতার করে।
ইউএনও সালমা পারভীন গোপালগঞ্জে বদলির আদেশের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক পদে ওখানে আমাকে বদলি করা হয়েছে।
দুই বছর ইউএনও পদে থাকলে পরবর্তীতে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক হিসেবে দায়িত্বপালনের সুযোগ থাকলেও সেক্ষেত্রে এটি পদোন্নতি হিসেবে বিবেচিত হবে না।
বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জাদুকাঁটা নদীতে আমার নামে ড্রেজার চলত- সেই তথ্য আমার জানা নেই। অভিযোগ ও প্রতিবাদ সমাবেশের পর চাঁদাবাজি বন্ধে টোল ট্যাক্স নির্ধারণ করে চার্ট টাঙানো হয়েছে।