আলহাজ্ব সরকার টুটুল সিরাজগঞ্জ তাড়ান প্রতিনিধি : তাড়াশ উপজেলার কুসুম্বী গ্রামের আমিনুর রহমান টুটুল
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিয়ে পুলিশের গুলিতে চোখ হারাতে বসেছেন সিরাজগঞ্জের তাড়াশের আমিনুর রহমান টুটুল (২৩)। তিনি ডান চোখে দেখতে পেলেও বাঁ চোখে মোটেও দেখতে পাচ্ছেন না। গুলিবিদ্ধ হয়ে টাকার অভাবে চিকিৎসা করতে পারছে না পরিবার।
আমিনুর রহমান টুটুল উপজেলার বারুহাস ইউনিয়নের কুসুম্বী গ্রামের মো. আলম হোসেনের ছেলে ও সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজের রসায়ন বিভাগের ২০২২-২৩ বছরের শিক্ষার্থী।
এদিকে বিনা চিকিৎসায় গুলিবিদ্ধ বাঁ চোখ স্বাভাবিক না হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। একমাত্র ছেলের অবস্থার কথা বর্ণনা করতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ছেন বাবা-মা। ছেলের চিকিৎসার জন্য সহযোগিতাও চেয়েছেন তারা।জানা যায়, গত ১৬ জুলাই সিরাজগঞ্জ ইসলামিয়া কলেজ মাঠে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে সে। একপর্যায়ে সেখানে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে পুলিশ টিয়ার গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করলে পুরো এলাকা অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে।ছাড়া পুলিশের ছোড়া ৩২টি রাবার বুলেট লাগে আমিনুর রহমান টুটুলের শরীরে। এ সময় ছোটাছুটির একপর্যায়ে বাঁ চোখে গুলিবিদ্ধ হয় সে। পরে সহপাঠীদের সহায়তায় তাকে সিরাজগঞ্জ শহরের একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। এরপর গত ১৮ জুলাই ঢাকা জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। তবে উন্নত চিকিৎসার জন্য ভারতের চেন্নাই হাসপাতালে রেটিনা অপারেশন করতে হবে।
গুলিবিদ্ধ শিক্ষার্থী আমিনুর রহমান টুটুল জানান, গত ১৬ জুলাই সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজের বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে আমিও অংশগ্রহণ করি। তখন পুলিশের ছোড়া রাবার বুলেট (গুলি) পিঠে ও চোখে লাগে।
একপর্যায়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লে আমার রুমমেট ও শিক্ষার্থীরা আমাকে একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে ভর্তি করে। পরে আমার বন্ধুদের সহযোগিতায় ১৮ জুলাই ঢাকা জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়ে একটু সুস্থ আছি। তবে আমার চোখে অপারেশন করতে হবে ভারতে গিয়ে। কিন্তু আমরা এ মুহূর্তে আর্থিক সংকটে আছি। চোখের আলো ফেরাতে উন্নত চিকিৎসা পেতে তিনি সরকারের কাছে সহযোগিতা চেয়েছেন।
চোখ হারানো টুটুলের মা হামেছা খাতুন বলেন, সংসারে তো টানাপোড়েন চলে। আমার সন্তানের বাঁ চোখ দিয়ে দেখতে পারছে না। টুটুলকে যেন কেউ কিছু একটা স্থায়ী ব্যবস্থা করে দেয়। যাতে আমার সংসার চালাতে পারে।
তিনি আরও জানান, আমার কোনো জমি নাই যে বিক্রি করে সন্তানের চিকিৎসা করাব। ছেলে আহত হওয়ার পর ছয় দিন হাসপাতালে থাকলেও টাকার অভাবে চিকিৎসা শেষ না করে বাড়িতে নিয়ে চলে আসি।
টুটুলের বাবা মো. আলম হোসেন জানান, আমার একমাত্র ছেলেকে কীভাবে চিকিৎসা করাব। আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। আমি হাঁস পালন করে সংসার চালাই। তাও ছেলের চিকিৎসার জন্য বিক্রি করেছি। ধারদেনা করে এ পর্যন্ত প্রায় ৫০ হাজার টাকা শেষ করেছি। আমার হাতে আর কোনো টাকা-পয়সা নেই। এখনো তার চোখের অপারেশন বাকি। বিত্তবান ব্যক্তি ও সরকারের কাছে ছেলের চিকিৎসার জন্য আর্থিক সহযোগিতার অনুরোধ জানান তিনি।
তাড়াশ উপজেলায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী বলেন, আমি কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক এবং দেশবাসীর কাছে আমিনুরকে আর্থিক সহযোগিতা করার অনুরোধ জানাচ্ছি। সরকারের কাছে আবেদন জানাচ্ছি তিনি যেন একটি সরকারি চাকরি পান। এ ছাড়া আমরা তাড়াশ উপজেলার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছাত্রসমাজ তার পাশে আছি এবং থাকব।
প্রকাশক ও সম্পাদকঃ সোহেল সরকার কর্তৃক লন্ডন যুক্তরাজ্য থেকে প্রকাশিত
সহ সম্পাদকঃ মোঃ ফরিদ হোসেন বার্তা সম্পাদকঃ মোঃ জিয়াউল ইসলাম জিয়া
সাথী সোহেল জনকল্যাণ ফাউন্ডেশন (আর্তমানবতার সেবায়) বিকাশঃ ০১৩০২৪৪৭৩৭৩