September 19, 2024, 12:52 am
শিরোনাম
ঈদগাঁও উপজেলার ইসলামাবাদ  বিএনপি’র আহবায়ক কমিটি অনুমোদন তাহিরপুরের ভুয়া সমন্বয়ক সেজে নিরপরাধ মানুষের নামে মিথ্যা মামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন চাকরিচ্যুত সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের তিনটি দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি। বগুড়ায় এম-ট্যাবের প্রোগ্রাম চালাচ্ছে সভাপতি মাহাবুব, আছে মোটা অংকের অর্থের লেনদেনের অভিযোগ। বিশ্বম্ভরপুর থানা পুলিশের অভিযানে ৫০০ গ্রাম গাঁজাসহ গ্রেফতার-১ তাহিরপুরে যাদুকাটা নদীর পাড় কাটার অপরাধে ২৬ জনকে কারাদণ্ড প্রদান জাতীয় প্রতিরক্ষা ব্যব্স্থাপনায় জনগনের অংশগ্রহণের দাবী জাতীয় পর্যবেক্ষক পরিষদের বাংলাদেশকে ঘিরে পরাশক্তির উত্থান সম্ভাবনা -আবু জাফর মাহমুদ মেয়র মঈন কাদরির আমন্ত্রনে বার্কিং টাউন হল পরিদর্শনে ইউকে বাংলা রিপোর্টার্স ইউনিটির প্রতিনিধি দল চিতলমারীতে ভারি বৃষ্টিতে চাষিদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি

সিরাজগঞ্জে যমুনার পানি ধীরগতিতে কমছে, বানভাসিরা খাদ্য সংকটে

মোঃ লুৎফর রহমান লিটন
স্টাফ রিপোর্টার

উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও মৌসুমাী বায়ুর প্রভাবে সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীর পানি ১১ দিন ধরে বিপৎসীমার ওপরেই রয়েছে। গত ৩ দিন ধরে যমুনার পানি ধীরগতিতে কমছে। এখনো বইছে বিপৎসীমার ১৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে। পানি কমলেও অনেকস্থানে বাড়ি-ঘর, রাস্তাঘাট, মাঠ ও নিচু এলাকাসহ ফসলি জমির কোনো জায়গা থেকেই পানি নামেনি। এতে বানভাসি মানুষের মধ্যে তীব্র খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে।

চলতি বন্যায় মানুষের মতো গবাদিপশুও পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। জেলার সদর, কাজীপুর, বেলকুচি, শাহজাদপুর ও চৌহালী উপজেলার প্রায় ৩০ হাজার গবাদিপশু এখনও পানিবন্দী। এদের পলিথিন কিংবা কাপড়ের ছাউনি তৈরি করে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ও উঁচু স্থানে রাখা হয়েছে। বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হওয়ায় খাবারের সংকটসহ নানা দুর্ভোগে রয়েছে বানভাসি মানুষ।

রোববার (১৪ জুলাই) দুপুরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী রঞ্জিত কুমার সরকার বলেন, গত ৬ ঘণ্টায় সিরাজগঞ্জ শহর রক্ষা হার্ড পয়েন্টে যমুনা নদীর পানি ১ সেন্টিমিটার কমে বিপৎসীমার ১৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। একই সঙ্গে কাজিপুর মেঘাই ঘাট পয়েন্টে ২ সেন্টিমিটার কমে বিপৎসীমার ৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

রঞ্জিত কুমার সরকার আরও বলেন, উজানের ঢলে যমুনায় যেভাবে পানি বৃদ্ধি পেয়েছিলো। বর্তমানে সেভাবে কমছে না। গত শুক্রবার থেকে পানি কমতে শুরু করেছে। যমুনাসহ অভ্যন্তরীণ নদ-নদীর পানি কমায় জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। এই মুহূর্তে পানি বাড়ার আশঙ্কা নাই।

বন্যাকবলিত মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চরাঞ্চলের সব জায়গা এখনো পানির নিচে। বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হওয়ায় দুর্ভোগ মারাত্মক পর্যায়ে পৌঁছেছে। বন্যার কারণে তারা ১১ দিন ধরে কর্মহীন। ফলে তিন বেলা ঠিকমতো খাওয়ার উপায় বেশির ভাগ মানুষের নেই। অনেকেই গবাদিপশুর সঙ্গে ছাপড়া তুলে থাকছেন। ফলে ওই সব স্থান নোংরা হয়ে পড়েছে। অনেকের অসুস্থ হওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে। সেই সাথে অনেকের হাত-পায়ে পানিবাহিত চর্মরোগ দেখা দিয়েছে। এসব বানভাসির মধ্যে বিশুদ্ধ পানিসহ তীব্র খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে।

সদর উপজেলার কাওয়াকোলা ইউনিয়নের বর্ণি গ্রামের কৃষক হাকিম শেখ বলেন, ঘরবাড়ি ও রাস্তাঘাট পানিতে তলাইয়া গেছে। গরু-বাছুর নিয়ে বিপদে পড়েছি। বাড়িতে রান্না করতে পারি না। সব জাগাতে পানি। আমাদের থাকার জাগা নাই, গরু-ছাগল রাখবে কোনে। ঠিকমতো গরু-ছাগলের খাবারও খাওয়াতে পারছি না। সব মিলে বিপদে রয়েছি।

একই উপজেলার হাটপাচিল গ্রামের করিমন বেগম বলেন, বন্যার পানিতে বাড়ি ভেঙে গেছে, সন্তানরাও দূরের গ্রামে চলে গেছে। আমরা দুই বুড়ো-বুড়ি যাওয়ার কোনো জায়গা না পেয়ে নদীর পাড়েই ছাউনি বানিয়ে কোনোরকমে বেঁচে আছি। বৃষ্টিতে খুব কষ্ট হয়েছে। তার ওপর ঘরে কোনো খাবার নেই।

জানা যায়, গত তিনদিন ধরে কমতে শুরু করেছে যমুনা নদীর পানি। ফলে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নেওয়া মানুষ বাড়ি-ঘরে ফিরতে শুরু করেছে। তবে এখনো পানিবন্দী অবস্থায় দিন পার করছে জেলার পাঁচটি উপজেলার প্রায় ১ লাখ মানুষ। সড়কে পানি থাকায় ব্যাহত হচ্ছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। বন্ধ রয়েছে শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম। পানির নিচে তলিয়ে রয়েছে প্রায় ১০ হাজার হেক্টর জমির ফসল ও শতাধিক তাঁত কারখানা। ফলে চরম দুর্ভোগে রয়েছেন বন্যাকবলিত এলাকার কৃষক ও শ্রমজীবীরা।

সিরাজগঞ্জ প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ওমর ফারুক বলেন, জেলার পাঁচটি উপজেলায় প্রায় ৩০ হাজার গবাদিপশু পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে কাজীপুর, সদর ও চৌহালী উপজেলায় বেশি। চরাঞ্চলে নিচু এলাকার ঘাস পানিতে তলিয়ে গেছে। এ জন্য সমস্যা হচ্ছে। তবে যমুনার পানি কমতে থাকায় কিছুটা উন্নতি হচ্ছে। পানিবন্দী গবাদিপশুর সংখ্যা কমে আসছে। আমরা তালিকা করছি, যাতে প্রান্তিক ও দরিদ্র খামারিরা গবাদিপশুর খাদ্য পায়। গবাদিপশু যেন রোগব্যাধিতে আক্রান্ত না হয়, এ জন্য আমরা পাঁচটি মেডিকেল টিম গঠন করেছি। তারা নিয়মিত বানভাসি কৃষক ও খামারিদের পরামর্শ দিচ্ছেন।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. আক্তারুজ্জামান জানান, জেলার পাঁচটি উপজেলার ৩৪টি ইউনিয়নে ২৩ হাজার ৩০৬টি পরিবারের এক লাখ ৩ হাজার ৫৯৪ জন মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। এসব মানুষের মধ্যে ইতোমধ্যে ১৩৩ টন চাল, ৫ লাখ টাকা ও ৩০০ প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। এখনও ১ হাজার ১৬৭ টন চাল, ২০ লাখ টাকা ও ৭০০ প্যাকেট শুকনো খাবার মজুদ আছে।

তিনি আরও বলেন, চলতি বন্যায় জেলার সদর, শাহজাদপুর ও চৌহালীতে আটজনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে নৌকা ডুবে চারজন ও পানিতে ডুবে চারজন মারা গেছেন।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *


Our Like Page